বড় শহরে বেশিরভাগ লোকজনই ফ্ল্যাটে বাস করতে অভ্যস্ত | বাড়ির সামনে বাগান তাই অনেকের কাছেই স্বপ্ন | কিন্তু এমন অনেক গাছপালাই আছে যা ফ্ল্যাটে লাগানো যায় |এর জন্য আপনার বড় ব্যালকনি বা ছাদেরও দরকার নেই | ইনডোর প্ল্যান্টস শুধু দেখতে সুন্দর লাগে তাই নয়‚ একই সঙ্গে এই গাছপালা ঘরের ভিতরের ক্ষতিকারক গ্যাস এবং দূষিত পদার্থের হাত থেকে আমাদের সুরক্ষিত রাখে |এক গবেষণায় দেখা যায়, ঘরের ভেতরের বাতাস বাইরের বাতাসের তুলনায় ২ থেকে ৫ গুণ বেশি দূষিত হয়ে থাকে। Formaldehyde, Volatile Organic Compounds (benzene and trichloroethylene or TCE), Airborne Biological Pollutants, Carbon Monoxide and Nitrogen Oxides, Pesticides and Disinfectants (phenols), and radon সাধারণত ঘরের ভিতরের এইসব দূষিত পদার্থ পওয়া যায় | এর থেকে অ্যালার্জি‚ মাথা ব্যথা‚ ক্লান্তি ভাব‚ নার্ভাস সিস্টেমের ডিসওর্ডার হতে পারে | শুধু তাই নয় মারাত্মক ক্যান্সার অবধি হতে পারে | আজকে রইলো দশটা ইনডোর গাছের হদিস যা ঘরের ভিতরে উপস্থিত Formaldehyde, Benzene, Carbon Monoxide কে মিটিয়ে ফেলতে সাহায্য করে :
অ্যালোভেরা
বাংলায় এর নাম ঘৃতকুমারি বা ঘৃতকাঞ্চন। এই গাছের রস ত্বক ও চুল পরিচর্যায় কাজে লাগে। ঘরের ভেতরের বাতাসকে পরিষ্কার রাখতে এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এর তুলনা নেই। ঘরের কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফর্মালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে পরিষ্কার করে ঘর দূষণমুক্ত রাখে। মাত্র একটি অ্যালোভেরা গাছ ৯টি বায়োলজিকাল এয়ার পিউরিফায়ারের সমান কাজ করে।
এরিকা পাম
একে বাটারফ্লাই পামও বলা হয়। প্রতি মানুষ পিছু চারটে মানুষের মতো উচ্চতার এরিকা পাম থাকলে বাড়ির পরিবেশ দূষণমুক্ত হয়ে যেত। এই গাছ আবহাওয়াকে ঠান্ডা রাখেতে সাহায্য করে। তবে এই গাছ রোদ ছাড়া বাঁচতে পারে না। তাই সপ্তাহে একবার অন্তত এই গাছ রোদে রাখতেই হবে।
Areca Palm |
লেডি পাম (Rhapis excelsa) : সাধারণত এটি রাপিস নামে বেশি পরিচিত, খুব সহজেই এই গাছ ঘরের ভিতর রাখা যায় |লেডি পাম খুব ধীরে বৃদ্ধি পায়। খুব একটা রোদেরও দরকার পড়ে না এই গাছের | একই সঙ্গে সপ্তাহে একদিন জল দিলেই হয়ে যায় |
Lady Palm |
ড্রাকাইনা বা জ্যানেট ক্রেগ (Dracaena deremensis)
কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই এই গাছ ঘরের মধ্যে রাখা যায় | কম আলো‚ কম জল সব পরিবেশের সঙ্গে এই গাছ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে |এই গাছ ঘরের বাতাস থাক বেনজেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন দূর করে।
তবে এই গাছ ঘরের কুকুর বা বিড়ালের জন্য বিষাক্ত।
ড্রাগন টি
ড্রাগন টি খুব সহজে যত্ন এবং পরিচর্চা করা যায়। নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্ন তাপমাত্রায় বেড়ে উঠার আশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই গাছটির। আলোর প্রয়োজন থাকলেও সূর্যের আলোর প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন নিয়মিত পানি দিলেই এই গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে।
পথোস / মানি প্লান্ট
পথোস কে আমরা সাধারণত মানিপ্ল্যান্ট হিসেবেই চিনি। এর আলাদা নাম জানেন না অধিকাংশ মানুষ। পথোসের তেমন কোনো যত্ন না নিলেও চলে। শুধু গাছের মাটি শুকিয়ে গেলে সামান্য পানি দিতে হয় আর বারান্দার গ্রিলের সাথে গাছ বাইয়ে দিলেই চলে।
আপনার ঘরের যেকোনো কোনায় রেখে দিতে পারেন এই লতানো গাছটিকে, চুপচাপ বসে আপনার ঘরের দূষণ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখবে।
এই গাছটির পাতা দেখতে অনেকটা হৃৎপিণ্ডের মতো। কম আলো এবং ঠাণ্ডা সহ্য করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে এই গাছটির। পথোস ফরমালডিহাইড এবং কার্বনমনোক্সাইড থেকে বাতাসকে মুক্ত করে। তাই নিশ্চিন্তে ঘরে রাখতেই পারেন ঝোপযুক্ত গাছটি।বায়ু দূষণকারী গ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে কাঠের আসবাবপত্রে যে আঠা ব্যবহৃত হয় তা থেকে তৈরি দূষণ এই গাছ শোষণ করে নেয়। তবে এই গাছের পাতা বিষাক্ত।
ফিগ
সিগারেটের কারণে যে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তার বিরুদ্ধে কাজ করার এক আত্যাশ্চর্য ক্ষমতা রয়েছে এই গাছটির। কাজেই যারা ঘরে ধূমপান করেন, তাদের ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত করার জন্য এই গাছটি রাখতে পারেন। বেশ কার্যকর ফল দেবে নিঃসন্দেহে বলা যায়। এটি কার্বন ড্রাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ দূর করে থাকে।
পিস লিলি (Spathiphyllum)
পিস লিলি আকারে ছোট কিন্তু বাতাস পরিষ্কার করার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা এর রয়েছে। পিস লিলি বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক এবং টক্সিন নিমেষের মধ্যে শুষে নিতে পারে। খুব সহজেই জন্মে এই গাছ, গ্রীষ্মকালে ফুলও হয়।
এই গাছে আবার খুব সুন্দর সাদা ফুলের মতো পাতাও হয় |
এই গাছ ছায়াযুক্ত স্থান ও কম ভেজা মাটিতে রাখলে দ্রুতবৃদ্ধি পায়। পিস লিলি বাতাসে মিশে থাকা ট্রাইক্লোরোথাইলিন, অ্যামোনিয়া, বেন্জেন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন এবং ফর্মালডিহাইড জাতীয় টক্সিন শুষে ঘরের বাতাসকে দ্রুতই পরিষ্কার করে দেয়।
স্পাইডার প্লান্ট
চিকন চিকন পাতার এই গাছটি ঘরের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ গাছ। নিয়মিত পানি দিলে আর বারান্দায় রাখলেই এই গাছ সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে। সাদা আর সবুজের সংমিশ্রণের এই গাছটির পাতাগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে থাকে বলে এটিকে স্পাইডার প্ল্যান্ট বলা হয়ে থাকে। ছোটবড় প্রায় সব নার্সারিতেই এই গাছ বেশ সহজলভ্য।
স্পাইডার প্লান্ট বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে নিতে পারে। এই গাছ প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড শোষণ করতে পারে বলে রান্না ঘরে এই গাছ রাখলে ভালো। একটা স্পাইডার প্লান্ট প্রায় ২০০ বর্গমিটার জায়গার বাতাস পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারে। মোটামুটি উজ্জ্বল ও সরাসরি আলোর বিপরীতে এই গাছ ভালো বাড়তে পারে।
চাইনিজ এভারগ্রিন
এই গাছ কম আলো, কম জলেও বাঁচে বলে বাড়ির ভেতরে যেখানে সূর্যের আলো প্রায় পৌঁছায় না, সেখানেও বেঁচে থাকে এই গাছ। এই গাছকে এয়ার পিউরিফায়ার নামেও ডাকা হয়।
স্নেক প্ল্যান্ট
ঘরে জমে থাকা টক্সিন পরিষ্কার বা অক্সিজেন সরবরাহ তো করেই। এর থেকেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটি হলো রাতেও এরা ঘরের মধ্যে অক্সিজেন ছাড়ে। বেডরুমে রাখার জন্য সব থেকে আদর্শ গাছ এটা। অফিস কিংবা রেস্টুরেন্টে এই গাছটি প্রতিনিয়ত দেখা যায়। এ গাছ সহজে মরে না। বিশেষ আলো বা জলেরও প্রয়োজন পড়ে না। মাঝে মাঝে পানি দিলেই চলে। শুকনা স্থানে এই গাছ হয়ে থাকে। অল্প আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে। ঘরের ভেতরের বাতাসে থাকা বেনজেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও জাইলিন নামক বিষক্ত রাসায়নিক গ্যাসকে দূর করে স্নেক প্ল্যান্ট।
নাসার বিজ্ঞানীরা এই গাছকে Top Air-purifying Plant-এর স্বীকৃতি দিয়েছে
গার্ডেন মাম
গবেষণায় দেখা যায় যে, গার্ডেন মাম বাতাস পরিষ্কার করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেনজেন, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে। জনপ্রিয় এই গাছটি স্বল্প খরচেই ও পরিচর্চায় ঘরের টবে লাগানো যায়।
বস্টন ফার্ন
ফ্রিলের মতো এই গাছ বাড়িকে ঠাণ্ডা রাখেতে সাহায্য করে। বেনজেন, জাইলিন ও ফর্মালডিহাইডের মতো বায়ু দূষণকারী গ্যাস শোষণ করার সঙ্গে সঙ্গে এই গাছ প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়ে। তাই গরমকালে এই গাছ পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে। বস্টন ফার্ন ঠাণ্ডা ভেজা আদ্র স্থানে জন্মাতে পারে। এই গাছের জন্য সূর্যালোকের প্রয়োজন নেই। এই ছোট্ট গাছটির উপযুক্ত জন্ম স্থান হছে আমাদের বাথরুম।
রাবার গাছ (Ficus robusta)
আকৃতি ও গঠনের দিক থেকে ফিকাস গাছটি অনেকেরই পছন্দ। ঘরের বাতাস দ্রুত এবং খুব ভালো পরিষ্কার করতে পারে এই গাছ। বিশেষত, বাতাসের টক্সিন শুষে নেয় এবং টাটকা বাতাসের জোগান দিতে পারে এই গাছ। কোন পাত্রে এই গাছ লাগানো হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে এর বৃদ্ধি। এরা সাধারণত ২ থেকে ৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে।
এই গাছের বৃদ্ধির জন্য খুব একটা আলো বা জলের প্রয়োজন হয় না। তবে ঘরে যদি ছোট বাচ্চা বা পোষ্য থাকে, তাদের থেকে গাছটিকে একটু দূরে রাখতে হবে। কারণ এ গাছের পাতা শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
ইংলিশ আইভি
এই গাছের পাতা বিষাক্ত কিন্তু আর সব হাউস প্লান্টের মতো এই গাছেও বেনজেন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিনের মতো বায়ু দূষণকারী গ্যাস শোষণ করার সংঙ্গে সংঙ্গে সিন্থেটিক মেটেরিয়াল থেকে যে দূষণ ছড়ায় তাও কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রঙের ইংলিশ আইভি বাজারে পাওয়া যায়। শীতকালে এই গাছ দ্রুত বাড়ে।
ব্যাম্বো পাম
ঝোপযুক্ত গাছটি ঘরের মধ্যে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। ব্যাম্বো প্ল্যাম টিকিয়ে রাখতে বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। কয়েকদিন পর পর কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে গাছটি রাখতে হয়। এই গাছ খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। এই গাছ ৮ থেকে ১২ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণমুক্ত করে ঘরের পরিবেশকে করে তোলে বসবাসের উপযোগী।
ইন্ডিয়ান ব্যাসিল (Ocimum
tenuiflorum)
বা
তুলসী
গাছ
ঘরে
খুব
সহজেই
রাখা
যায়
| খুব
একটা
যত্নেরও দরকার
হয়
না
এই
গাছের
| পুজোয়
কাজে
লাগা
ছাড়াও
এই
গাছের
বিভিন্ন মেডিসিনাল প্রপার্টি আছে
| এছাড়াও
বাতাসকে পরিষ্কার রাখে
এই
গাছ
|
Source
No comments:
Post a Comment