সুন্দর পৃথিবীকে পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য রাখতে গাছের কোনো
বিকল্প নেই। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের মোট ভূ-ভাগের প্রায় ২৫ ভাগ
বনভূমি দরকার। গাছ মানুষের বন্ধু ও পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপকরণ। কিন্তু সব গাছ মানুষের
জন্য উপকারী কিংবা পরিবেশবান্ধব নয়। মানুষের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে ইউক্যালিপটাস গাছ।
ইউক্যালিপটাস গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়। চারার দাম কম ও সহজলভ্য। কাঠ বেশ শক্ত।
সহজে ঘুণ ধরে না। ক্ষেত-খামারের আইলে, বসতবাড়ির আশপাশে, রাস্তার ধারে,
জলাশয়ের পাশে লাগানো যায়। এ কাঠ দিয়ে খুঁটি তৈরি করা যায়। জানালা, দরজার
চৌকাঠ ও ঘরের রোয়া, বাতা ও বিম তৈরির কাজে এ গাছ কাজে লাগে।
ক্ষেতের আইলে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালে পানির অভাবে ওই ক্ষেতের ফসলের ফলন ব্যাপক হ্রাস পায় |
এই গাছটির অনেক গুনাবলী
রয়েছে এবং সঠিক জায়গায় ঠিক মত রোপন না করলে অবশ্যই এই গুনাবলী গুলিই ক্ষতির কারণ
হতে পারে | গাছটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই গাছটি প্রচুর পানি
শোষণ করে | আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে - আমাদের দেশে
বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয় না এবং বেশিরভাগ নদী বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমাদের
দেশটি আরো শুকনো হয়ে যাচ্ছে | এই রকম শুকনো জমিতে ইউক্যালিপটাস
গাছটি রোপন করার মানে নেই - এইটাই সবচেয়ে প্রধান কারণ | রংপুর
ও রাজশাহী বিভাগে ব্যাপকভাবে ছেয়ে গেছে ইউক্যালিপটাস গাছ। ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট,
নীলফামারী ও সৈয়দপুর ইত্যাদি এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তার
অনেক। দিনাজপুরেও ধানের আইলের পাশ দিয়ে মানুষ এই গাছ লাগাচ্ছে কারণ সরকার বলে ৫ বছরের
গাছ বেশ ভালো দামে কিনে নিচ্ছে |
আমাদের মত দেশে এই গাছের একমাত্র ভালো ব্যবহার হতে পারে
সেইসব জলাবদ্ধ জায়গায় যেখানে বদ্ধ পানি পরিবেশ দুষিত করছে - কয়েক বছর এই গাছ সেখানে
বাগানের মত লাগালেই সব পানি নিয়ে নিবে আর তারপর গাছগুলি কেটে ফেলে জায়গাটি 'রি-ক্লেইম' করা যায়| ইউক্যালিপটাস গাছ আমাদের মত স্বল্প বৃষ্টির
ও শুকনো দেশে উপকার থেকে অপকার বেশি করছে | আমাদের দেশে এই
গাছ লাগানোর কারণ হচ্ছে সল্প সময় কাঠ বানানোর জন্য কিন্তু এই স্বল্প সময়ের লাভের
জন্য দেশটিকে মরুভূমির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে | কিন্তু
যেখানে আমাদের সরকার নিজেই এই গাছ লাগাতে মানুষকে উত্সাহিত করছে সেখানে আমাদের
সরকারী বেতনভুক্ত বৃক্ষ ও পরিবেশ বিশারদরা কি করছেন সেটাই প্রশ্ন | যাই হোক - দেশের কোনো অঞ্চলে যদি মাত্রারিক্ত বৃষ্টি ও পানি বদ্ধতা থাকে -
যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম - সেখানে এই গাছ লাগিয়ে দেশের কাগজশিল্পের কিছু উপকার হয়ত
করা যায় - এছাড়া আর কোনো জায়গায় এই গাছ লাগানোর কারণ নেই|
আমাদের জলবায়ুর জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ মোটেই উপযোগী নয় উপরন্তু মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষন করে মারাত্নকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী সম্প্রতি এ সম্পর্কে বলেন, "এত দিন বিদেশি দাতা সংস্থার পরামর্শে সামাজিক বনায়নের নামে এ ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। এই গাছগুলোর নিচে অন্য কোনো গাছ জন্মায় না, এমনকি পাখিও বসে না। আকাশমণি গাছের রেনু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে অ্যাজমা হয়। এর কাঠ জ্বালানি হিসেবে বা আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না।" তিনি আরও বলেন; "দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন চরগুলোর মধ্যে যেগুলো টিকবে, সেগুলোতে সামাজিক বনায়ন করা হবে। ধানি জমির দুই পাশে ধইঞ্চা গাছ লাগানো হবে। এতে জমির পুষ্টি ও উর্বরাশক্তি বাড়বে। এনজিওরা সামাজিক বনায়নের নামে দেশের প্রধান সড়কগুলোর দুপাশ দখল করে আছে সাধারণ মানুষ এই জমিগুলো ব্যবহার করতে পারছে না।" (তথ্য: প্রথম আলো)
আমাদের জলবায়ুর জন্য ইউক্যালিপটাস গাছ মোটেই উপযোগী নয় উপরন্তু মাটি থেকে অতিমাত্রায় পানি শোষন করে মারাত্নকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী সম্প্রতি এ সম্পর্কে বলেন, "এত দিন বিদেশি দাতা সংস্থার পরামর্শে সামাজিক বনায়নের নামে এ ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। এই গাছগুলোর নিচে অন্য কোনো গাছ জন্মায় না, এমনকি পাখিও বসে না। আকাশমণি গাছের রেনু নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে গেলে অ্যাজমা হয়। এর কাঠ জ্বালানি হিসেবে বা আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায় না।" তিনি আরও বলেন; "দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন চরগুলোর মধ্যে যেগুলো টিকবে, সেগুলোতে সামাজিক বনায়ন করা হবে। ধানি জমির দুই পাশে ধইঞ্চা গাছ লাগানো হবে। এতে জমির পুষ্টি ও উর্বরাশক্তি বাড়বে। এনজিওরা সামাজিক বনায়নের নামে দেশের প্রধান সড়কগুলোর দুপাশ দখল করে আছে সাধারণ মানুষ এই জমিগুলো ব্যবহার করতে পারছে না।" (তথ্য: প্রথম আলো)
ক্ষেতের আইলে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালে পানির অভাবে ওই ক্ষেতের ফসলের ফলন ব্যাপক হ্রাস পায়। ইউক্যালিপটাস মাটি থেকে প্রচুর পানি গ্রহণ করে , পাকিস্তানে পাহাড়ি ঝরনার পাশে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণের ফলে ৮০ শতাংশ ঝরনার পানি শুকিয়ে যায়। সেই এলাকায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত পাঁচ বছরে ২ ইঞ্চি কমে যায়। পানির স্তর ৫-১০ ফুট নিচে চলে যায়। ভুট্টা ক্ষেতের পাশে এ গাছ রোপণের ফলে ইথিওপিয়ায় ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৯ থেকে ১৩ দশমিক ৫ টন হ্রাস পায়।
সম্প্রতি আফ্রিকান দেশ কেনিয়ায় ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেনিয়ার পরিবেশমন্ত্রী জন মাইচোকি আজ থেকে কয়েক বছর আগে ইউক্যালিপটাস গাছ তার দেশ থেকে সমূলে উচ্ছেদের আদেশ দেন।
ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। মানুষ যেভাবে সাময়িক লাভের আশায় দেশে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনির মতো ক্ষতিকর গাছ রোপণ করছে, তা অব্যাহত থাকলে একসময় দেশের পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। পানির স্তর আরো নিচে চলে যাবে। মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাবে। পানি ধারণক্ষমতা কমে যাবে। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাবে। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। বন্যপ্রাণী ও গাছপালার অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তাই এ পরিবেশবিনাশী বৃক্ষ রোপণ থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে।
No comments:
Post a Comment