গাছ পেয়ে নির্মল হাসি |
গত ১৩ই মে বগুড়া গাছ উৎসবে ১৭০০ গাছ বিতরণের মাধ্যমে আমাদের মোট গাছের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬১০০ যা আমাদের এই বছরের লক্ষ্যমাত্রা(৫০০০) ছাড়িয়ে গেছে, আশা করছি এই বছর আমরা ১০হাজার গাছ লাগাতে সক্ষম হবো। বগুড়া গাছ উৎসবের সংক্ষিপ্ত কিছু কথা তুলে ধরছি আপনাদের অবগতির জন্য।
১২ই মে রাত সাড়ে ১১ টার এস আর ট্র্যাভেলস এ চড়ে খুব সকালেই বগুড়া পৌঁছেছিলাম আমরা ৪জন। সেখানে আমাদের Host তৌফিকুর রহমান তুষার এর বাসায় ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা শেষ করেই বন বিভাগের অফিসের উদ্দেশে রওনা হই গাছের জন্য। কথা ছিল ৪/৫ টি ভ্যান দিয়ে গাছ গুলো ৫ টি স্কুলে পৌঁছে দিবো, কিন্তু গাছ গুলো এতো বড় আর সুন্দর ছিল যে ভ্যান দিয়ে নেয়া কিছুটা কষ্টকর হবে ভেবে আমরা পিক-আপ ভাড়া করি।
১৭০০ গাছ পিক-আপ এ উঠানোও ছিল বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যপার। আমরা গাছ গুলো পিক আপ এ এমন ভাবে গুছিয়ে রাখছিলাম যেন সব স্কুলই সব ধরনের গাছ পায়।এইবারের উৎসবে গাছের ভিন্নতা ছিল অনেক বেশী। কাঁঠাল, জাম, কদবেল, মেহগনি, গামার, গর্জন, ডালিম, আমলকী, নিম, তেলসুর, জলপাই, বকুল, অর্জুন জাতের গাছ। বন বিভাগের কর্মীরা(৫/৬জন) খুব সুন্দর ভাবে আমাদের চাহিদা মতোই গাছগুলো পিক আপ এ উঠিয়ে দিয়েছেন খুব হাসিমুখে, এতো গরমের মধ্যেও।
গাছ নিয়ে রওনা হতে আমাদের ১১ টা বেজে গিয়েছিলো। প্রথমেই আমরা গেলাম রামেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে প্রধান শিক্ষক জনাব মাহবুবুর রহমান স্যার সহ অন্যান্য শিক্ষকগণ খুবই আন্তরিকতার সহিত আমাদের স্বাগতম জানালেন। গাড়ি থেকে গাছ নামিয়ে স্কুলের বাচ্চাদের সহায়তায় একটি রুমে রাখি, কারণ প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান স্যার জানালেন উনি আমাদের সাথে সব গুলো স্কুলে যাবেন, উনার স্কুলে গাছ উৎসব করবেন পরদিন, উনার প্রস্তাবে আমরা যারপর নাই খুশি হলাম কারণ নতুন জায়গায় স্কুল গুলো খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্ট সাধ্য হতো। মাহবুবুর রহমান স্যারের অনুমতি নিয়ে আমরা উপস্থিত থেকে সেখানে তিনটি গাছ (নিম, আমলকী ও কদবেল) লাগিয়েছি স্যারদের সহায়তায়। এখানেই শেষ নয়, গাছের লাগিয়ে মাহবুবুর রহমান স্যার আপ্যায়ন করলেন বগুড়ার বিখ্যাত দই ও চিড়া দিয়ে(যদিও আগেই বলে রাখা ছিল কোন রকম আপ্যায়ন যেন না করা হয়)।
এরপর আমরা একে একে গাড়ির গাছ নিয়ে সাতচুয়া কামারচট্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মমিনখাদা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সব শেষে পদ্মপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এ গেলাম। সাতচুয়া কামারচট্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও আমরা উপস্থিত থেকে গাছ লাগিয়ে এসেছি। সবখানেই আমাদের সাথে ছিলেন প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান স্যার। আমরা কৃতজ্ঞ মাহবুবুর রহমান স্যারের নিকট, আমরা কৃতজ্ঞ সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকট তাঁদের আন্তরিক ব্যবহারের জন্য।
পদ্মপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথা বিশেষ ভাবে না বললেই নয়। এতো গুছানো আর স্মার্ট একটা স্কুল বাংলাদেশের বড় বড় শহরেও দেখা পাওয়া যাবেনা হয়তো। বলে রাখা ভালো এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল স্যার প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার প্রাপ্ত। উনি স্কুলের স্কাউট টিমকে এতো সুন্দরভাবে প্রশিক্ষিত করেছেন যে আমরা তাদের সুশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে রীতিমত মুগ্ধ।
তারপর স্কাউট গার্ল অ্যাসেম্বলিকে বলল আমাদের ধন্যবাদ দিতে, তারা খুব সুন্দরভাবে তালে তালে করতালির মতো করে আমাদের ধন্যবাদ জানালো। এরপর স্যার তাদেরকে বললেন সারিবদ্ধ ভাবে একে একে এসে গাছ নিতে এবং গাছ নিয়ে এসে আবার লাইনে দাঁড়াতে। শিক্ষার্থীরা গাছ নিয়ে ঘুরে এসে আবার দাঁড়াচ্ছিল মনে হচ্ছিলো গাছের রেলগাড়ি চলছে। না দেখলে এই দৃশ্য দেখার আনন্দ বুঝানো যাবেনা। সবাই যখন গাছ নিয়ে লাইনে দাঁড়ালো আবার, ঐটাও ছিল দারুন একটা দৃশ্য, স্কুলের মাঠকে মনে হচ্ছিলো গাছের বাগান। আমাদের মনে হচ্ছিলো আমাদের সারাদিনের চেষ্টা সফল হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞ জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল স্যারের নিকট, আমরা কৃতজ্ঞ পদ্মপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকগণ ও সকল শিক্ষার্থীদের নিকট।
গাছ উৎসব শেষ করে যখন আমাদের Host তৌফিকুর রহমান তুষার এর বাসায় ফিরে বিশ্রাম করছিলাম তখনি পেলাম আমাদের এই উৎসবের সবচেয়ে বড় চমক।
তৌফিকুর রহমান তুষার আমাদের Super Active Member হিসেবে যুক্ত হবার ঘোষণা দিলো, সাথে তাঁর সহধর্মিণী(শবনম মুস্তারি) ও তিন বছরের ছেলে আজমাইন তৌফিক কে আমাদের Exclusive Member হিসেবে যুক্ত হবার ঘোষণা দিলো। Tree for Mankind পেলো নতুন তিনজন মেম্বার, সাথে একজন Guest Member দেব জ্যোতি আইচ মিশু।
এভাবেই আমাদের বগুড়া গাছ উৎসবের সফল সমাপ্তি হলো, বেড়ে গেলো পরবর্তী গাছ উৎসবের (১৫ই জুলাই, কুমিল্লা) জন্য অধীর প্রতীক্ষা।
No comments:
Post a Comment