চালকের আসনের পাশের জানালা বেয়ে লকলকিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশার ছাদে উঠে গেছে লতা। শিম গাছ একটু দ্রুতই বাড়ে। তাই অল্পদিনের মধ্যেই ঝুপিয়ে যাবে, বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু অটোরিকশায় শিম গাছ কেন? উত্তর এল, ‘খালি শিম গাছ না তো, আরো নয় পদের গাছ আছে।’
যিনি উত্তর দিলেন তিনি এই বাহনটির চালক। নাম মোহাম্মদ জাকির, বাড়ি বরগুনা। বললেন, ‘এই সিএনজির মধ্যে হরিতকি গাছ আছে, পাতাবাহার আছে কয়েক রকমের।’
চালকের আসন থেকে নামতেই দেখা গেলো এক চুলও বাড়িয়ে বলেননি জাকির। তার বসার দুই পাশে নানা রকম গাছ লাগানো। প্লাস্টিকের বোতলের ভেতর পানি দিয়ে পাতাবাহার, ডান পাশের জানালার সাথে প্লাস্টিকের ছোট বড় আরো বেশ কিছু বোতল দিয়ে টব বানানো। তাতেও চারা গাছ আছে বেশ কয়েকটি।
তাইবলে অটোরিকশায় গাছ? তাও আবার ১০ জাতের? কেন? প্রকৃতি যে কারো কারো উপর ভর করে তার প্রমাণ মোহাম্মদ জাকির। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা রীতিমত পাগলামির পর্যায়ে চলে গেছে।
মোহাম্মদ জাকির জানালেন গাছের প্রতি ভালোবাসা তার আজীবনের। সেই ভালোবাসার টানে নার্সারি করেছিলেন তিনি। সেটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তবে গাছের প্রতি তার ভালোবাসা যতটা, ক্রেতাদের ততটা না। ব্যবসায় লাভ হতো না তেমন।
সংসার চালানোর তাগিদে বিকল্প খুজতে হলো তাকে। ঢাকায় এসে অটোরিকশা চালানো শিখলেন। এখন ভাড়া নিয়ে চালান। কিন্তু গাছের প্রতি তার ভালোবাসা কমেনি একটুও। আর সেই ভালোবাসা থেকেই অটোরিকশায় সাজিয়েছেন গাছে গাছে।
ভেতরেই থাকে বোতল ভরা পানি। মাঝে মাঝে অটো থামিয়ে জিড়িয়ে নেয়ার ফাঁকে গাছে পানিও দিয়ে দেন। গাছের পাতায় লেগে থাকা ধুলো মুছে দেন। রাস্তার লোকজন ভিড় করে দেখে এই গাছপাগলা অটোচালকের কাণ্ড।
গাড়ি জোরে টানলে গাছ নষ্ট হয় না?- জানতে চাইলে জাকির বললেন, ‘নাহ, গাছের একটা পাতাও পড়ে না। দেখেন না কি সুন্দর বড় হইছে। ছাদে তার দিয়া মাচা বানায়া দিছি।’
-মালিক কিছু বলে না?
-কয় না আবার? কইছে আমার সিএনজির ছাদ নষ্ট কইরা ফালাইতেছো তুমি।
-আপনি কী বলেন?
-আমি কইছি ছাদ নষ্ট হইলে আমি সারায় দিমু। তবু গাছ ফালামু না।’
বৃক্ষ নিধনের যুগে মোহাম্মদ জাকিররা উদাহরণই বটে।
সূত্র:ঢাকাটাইমস
No comments:
Post a Comment