Planted 34,485 Trees....Mission to plant 1 Lac Trees

Saturday, August 26, 2017

যাদব পায়েং: একা একা আস্ত এক বন তৈরি করে ফেলেছেন যে মানুষটি!





৩৭ বছর আগের কথা মনে পড়লে একাই হেসে ওঠেন যাদব পায়েং। তখন তাকে সইতে হয়েছিল অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। অনেকে পাগলও ঠাওরাতো। এতে তিনি থাকতেন নির্বিকার। কতজনের কত রকমের নেশা থাকে; যাদব পায়েংকে পেয়ে বসেছিল গাছের চারা রোপণের নেশা। ১৯৭৯ সালে তার লক্ষ্যটা ছিল খুবই ছোটক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ও পাখিদের নিরাপদ আবাস গড়া। কিন্তু তিনি নিজেও জানতেন না যে, তার কর্ম একদিন স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে যাবে। কয়েক দশক পর আজ ৫৫ হেক্টর জমি জুড়ে গড়ে উঠেছে তার বন। সেখানে দাপাদাপি করে হাতি, বাঘ, গন্ডার ও হরিণ। সাফল্য দেখে এর পাশেই আরো ১৫৫ হেক্টর জমিতে শুরু করে দিয়েছেন চারা লাগানোর কাজ। জায়গাটির অবস্থান ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের জোরহাট জেলায়।

একক প্রচেষ্টায় একটি বন গড়ে তোলার কারণে আসাম সরকার সেই বনটির নামকরণ করেছেমুলাই কাথোনি বাড়ি। বাংলায় যার অর্থ মুলাইয়ের বন, আর মুলাই হচ্ছে যাদব পায়েংয়ের ডাক নাম। তার কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ২০১২ সালে তাকে আখ্যায়িত করেভারতের বনমানব’; ন্যাশনাল জিওগ্রাফি পত্রিকায় ছাপা হয় বিশেষ রিপোর্ট।এ বন নানা প্রাণীর বাসস্থান, এমনকি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির একশৃঙ্গ গণ্ডার, রয়েল বেঙ্গল টাইগারও রয়েছে এই তালিকায়। নানা জাতের গাছ লাগিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ বৈচিত্রও। যাদব পায়েং পণ করেছেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বনায়নে ভূমিকা রেখে যাবেন এবং লাগাতে থাকবেন গাছ। এ কর্মের মাঝেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন স্বর্গসুখ। নাম-ডাক হয়েছে দেখে আশ-পাশের সবাই এখন তাকে বেশ খাতির করে। তার সেই বন দেখতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ছুটে আসে। সেই তালিকায় বিদেশিরাও থাকে।


In 2015, he was honoured with Padma Shri, the fourth highest civilian award in India.
 

যাদব পায়েং আসামের মিশিং উপজাতি সম্প্রদায়ের লোক। তার বনায়নের কাহিনী সেদেশের বন কর্তৃপক্ষকে রীতিমত লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। কারণ সংশ্লিষ্ট লোকেদের উদাসীনতা ও জনগণের সচেতনতার অভাবে ভারতে বনের পরিমাণ কমছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সে জায়গায় যাদব তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায়। তার গল্পের শুরুটা এভাবেসে বছর ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল আসামে। টিনেজার যাদব তখন লক্ষ্য করছিলেন, শত শত মরা সাপ ভেসে যাচ্ছে বানের পানিতে আর অন্য প্রাণীরা মারা পড়ছিল নয়তো হচ্ছিল বাস্তুহারা।

Forest Man of India

আরো উপলব্ধি করছিলেন, পানির তোড়ে ধুয়ে যাচ্ছে উপরিভাগের মাটি। আশ-পাশের বনাঞ্চল ও জলাভূমিতে অতিথি পাখির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াটা ভীষণভাবে পীড়া দিচ্ছিল তাকে। কচি বয়সেও তিনি বুঝতে পারছিলেন, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুরুব্বি গোছের একজনকে এর কারণ ও সমাধান জিজ্ঞেস করাতে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, বন উজাড় হয়ে যাওয়াটাই প্রাণীদের বাসস্থান হারানোর একমাত্র কারণ এবং এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে নতুন বন সৃষ্টি করা। সেই সঙ্গে তার হাতে কয়েকটি বাঁশের চারা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এগুলো রোপণ শুরু কর।
যে কথা সেই কাজ। শক্তিশালী ব্রহ্মপুত্র নদের একটি চরের মধ্যে অবস্থিত নিজ গ্রামের একটি পরিত্যক্ত জমিতে শুরু করেন গাছের চারা লাগানোর কাজ। প্রথম পনের বছর তিনি লাগাতেন কেবল বাঁশ এবং দেশীয় অথবা কম মূল্যবান গাছের চারা। কিন্তু এখন তার বনে রয়েছে প্রচুর সেগুন গাছ। যেগুলোর বাজার মূল্য সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই। নতুন গাছগুলোতে পানি দেয়ার কাজটি তিনি একাই করেন আর সে কাজটি খুব কঠিন। কারণ পানির একমাত্র উত্স হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদ।

শুধুমাত্র গাছ লাগানোর মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেন না যাদব। মাটিকে উর্বর রাখতে নিয়মিতভাবে উইপোকা, কেঁচো, পিঁপড়া ও কীটপতঙ্গ ছাড়েন তিনি। তার নিজের কথায়, ‘মাটির উর্বরতা বাড়াতে উইপোকা ও পিঁপড়া খুবই উপকারী। এগুলো খুব কঠিন মাটিকেও নরম করে তোলে। ভারতের নর্থ ইস্টার্ন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ ওয়াটার এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট-এর কর্মকর্তা রিতু ঠাকুর তার কথার সঙ্গে পুরোপুরি একমত পিঁপড়া মাটিকে চাষযোগ্য করে তোলে এবং ভৌতভাবে এর মান বাড়ায় আর উইপোকা কতিপয় এনজাইম (জীবন্ত প্রাণীর দেহকোষে উত্পন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থবিশেষ, যা নিজে পরিবর্তিত না হয়ে অন্য পদার্থের পরিবর্তন সাধনে সক্ষম) নিঃসৃত করে রাসায়নিকভাবে মাটির পরিস্থিতিকে উন্নত করে।

বন বিস্তৃত হওয়ার পর নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন যাদব পায়েং। বন্যহাতিরা গ্রামে হানা দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলত বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত আর বাঘের কারণে গবাদিপশু রাখাই দায় হয়ে গিয়েছিল। এতে গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি দিত, তার বন ধ্বংস করে ফেলা হবে। কিন্তু যাদব এরও একটা সমাধান বের করে ফেলেনশুরু করেন আরো বেশি করে লাগানো, বিশেষত হাতির প্রিয় খাদ্য কলাগাছ। সেই সাথে বাড়তে থাকে হরিণের সংখ্যা। এতে করে হাতি ও বাঘের উপদ্রব থেকে রক্ষা পায় গ্রামবাসী এবং বেঁচে যায় যাদবের বন।

যাদবের নেশা বন তৈরি করা আর পেশা হচ্ছে গরু-মহিষ পালা। তার গোমহিষের সংখ্যা পঞ্চাশের মতো। জীবিকার তাগিদে নিজ গ্রামে প্রতিদিন সকালে ফেরি করে দুধ বিক্রি করেন তিনি। তার স্বপ্ন একটাই, আরো অনেক বন তৈরি করা। শুধুমাত্র আসাম সরকারই নয়, তার কর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিখ্যাত বিজ্ঞানী ড: এপিজে আব্দুল কালাম। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগই যাদব সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘এমন বনপ্রেমী লোক পৃথিবীতে আর একটিও আছে কি-না আমার জানা নেই। তিনি জীবন্ত কিংবদন্তী। সদিচ্ছার পাশাপাশি লক্ষ্যে অবিচল থাকলে একজন সাধারণ লোকও যে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। সত্যিই তিনি পূজনীয়।

Source


No comments:

Post a Comment