জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ, তাল গাছের মতো লম্বা গাছের
সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে
যাওয়া, মোবাইল ফোনের ব্যবহার, যত্রতত্র মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসানো, কলকারখানা ও
মোটরগাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কৃষি কাজে ভারী যন্ত্রের ব্যবহারসহ
নানা কারণে বজ্রপাতের হার বেড়ে গেছে।
গত কয়েক বছরে দেশে বজ্রপাত ও প্রাণহানি
বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে এসব কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি ইনস্টিটিউটের
প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্বে বজ্রপাতে মারা যাওয়ার এক-চতুর্থাংশ ঘটে
বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় মূলত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
বজ্রপাতের আক্রান্তের শিকার ৭৬ ভাগ পুরুষ।
গত কয়েক বছরে দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা ও এতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু কেন বজ্রপাতে মানুষ মারা যায় এবং দিন দিন মৃত্যুর হার বাড়ছে? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে
গিয়ে জানা গেছে বেশ কিছু তথ্য।
বজ্রপাত নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন এমন
বিশেষজ্ঞরা উল্লিখিত কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের
তথ্যমতে, বজ্রপাত সারা বছরই কমবেশি হয়। তবে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাতের
হার বেড়ে যায়। তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পাঁচটি এলাকা সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত প্রবণ।
এগুলো হচ্ছে-শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এবং সৈয়দপুর। এই পাঁচটি এলাকায়
বছরে গড়ে ৩২৪, ৩২৪, ২০৬, ১৯৫ এবং ১৭৯টি বজ পাত ঘটে। আর রাজধানীতে গড়ে বছরে বজ পাত
ঘটে ১২৪টি। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল, সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকায় সবচেয়ে বেশি
বজ্রপাত হয় মে
মাসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাকসুদ
কামাল বলেন, বিদ্যুৎ প্রবাহ মানুষের শরীর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অনেকটা ইলেকট্রিক শকের মতো। বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে মানুষ যেভাবে সঙ্গে সঙ্গে শকড
হয়, ঠিক একইভাবে বজ্রপাতেও মানুষ শকড হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে
কালো মেঘের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়েছে। তিনি বলেন, মানুষ
খোলা আকাশের নিচে যখন কাজ করে, বিশেষ করে কৃষি কাজে যখন থাকে তখন বজ্রপাত থেকে
রক্ষা পাওয়া বেশ কঠিন। তবে একটু সতর্ক হলেই নিজেকে রক্ষা করা যাবে। এক্ষেত্রে
আকাশে ঘন কালো মেঘ দেখলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে। তাহলেই বজ্রপাতের হাত
থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, হাওর ও উন্মুক্ত এলাকায় বড় গাছ তো দূরের কথা,
কোনো গাছপালাই থাকে না। ফলে এমন এলাকায় মানুষের চুলই সতর্কবার্তা দিতে পারে। বজ্রপাতের আগে মানুষের মাথার চুল খাঁড়া হয়ে যায়। এটা একটা সতর্কবার্তা। তখনই দ্রুত
সাবধান হতে হবে ।
বজ্রপাত যেখানে ঘটে তার আশপাশে লম্বা গাছ বা যে বস্তু থাকে
সাধারণত সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লম্বা গাছ বা লম্বা বস্তুর পাশে খাটো কিছু থাকলে
সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তাল গাছের মতো লম্বা গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সতর্কতার জন্য বিরূপ আবহাওয়ার সময় ঘরের ওয়াইফাই সংযোগ,
ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, মোবাইল, কম্পিউটার এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। বজ্রপাতের সময়
একসঙ্গে অনেক লোক জড়ো হওয়া যাবে না। বিশেষ করে উন্মুক্ত স্থানে একসঙ্গে অনেক লোক
একত্রিত হলে মৃত্যুর হার বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গাছের সংখ্যা কমে গেছে।
বিশেষ করে লম্বা গাছের সংখ্যা খুবই কম। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে রক্ষা পেতে হলে তাল গাছের
পাশাপাশি লম্বা হয় এমন গাছও লাগাতে হবে।
News Source : http://www.bd-pratidin.com/last-page/2017/09/26/267129