চল্লিশ লাখ মানুষের শহর চট্টগ্রামের দরদালানের ছাদগুলো একসময় সবুজে ভরে উঠবে। ছাদবাগানে
ফলবে লাউ, কুমড়া, টমেটো, শাক, শিমসহ নিত্যদিনের আহার্য সব সবজি। গোলাপ, টগর, জুঁই,
চামেলিরা ছড়াবে সৌরভ। আম, পেয়ারা, মাল্টাসহ হরেক রকমের বিষমুক্ত ফল হাত বাড়ালেই মিলবে
ছাদের বাগানে—এমন স্বপ্ন থেকেই শুরু হয়েছিল ছাদবাগানিদের ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘চট্টগ্রাম
বাগান পরিবারের’ পথ চলা।
বাগান-সংক্রান্ত
নানা পরামর্শের জন্য দ্রুতই চট্টগ্রামের ছাদবাগানিরা এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। শুরুর
পর ছয় মাসের মাথায় সংগঠনের সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০তে। আর দুই বছর পর বর্তমানে সংগঠনের
সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজারে। ছাদবাগানিদের নিয়ে বৃক্ষমেলা, গাছের চারা বিনিময়
ও গাছ–সংক্রান্ত নানা পরামর্শ বিতরণ করে বাগান পরিবার।
কথা
হয় সংগঠনটির অন্যতম অ্যাডমিন জিয়াউল বারীর সঙ্গে। পেশায় ব্যবসায়ী জিয়াউল নিজেও বাগান
করেন। শহরের ঈদগাঁ বউবাজারে তাঁর ছাদের বাগানে রয়েছে হরেক রকমের দেশি-বিদেশি সবজি,
ফল ও ফুল।
জিয়াউল
বারী জানালেন, তিনিসহ বর্তমানে সংগঠনের অ্যাডমিন ও মডারেটর আছেন ১৪ জন।
প্রতিবছর
তিন থেকে চারটি অনুষ্ঠানের (ইভেন্ট) আয়োজন করে বাগান পরিবার। ইভেন্টগুলোতে সংগঠনের
সদস্যরা এক হন। এসব অনুষ্ঠান আসলে একধরনের মিলনমেলা। সেখানে গাছ বিনিময়, চারা ও সার
বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া বাগান নিয়ে আলোচনা সভা, সেমিনার তো আছেই। এসবের পাশাপাশি বাগান
বিলাস নামের পত্রিকাও প্রকাশ করছেন তাঁরা। এখন পর্যন্ত এর দুটি সংখ্যা বের হয়েছে।
চট্টগ্রাম
বাগান পরিবার খুব জমজমাট একটি ফেসবুক গ্রুপ। এর সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত মাসব্যাপী প্রতিযোগিতার
আয়োজন করা হয় বলে জানালেন জিয়াউল।
প্রতিযোগিতায়
অংশ নেওয়া সদস্যরা প্রতিদিন ন্যূনতম বাগানের তিনটি ফুল-ফলের ছবি দেন গ্রুপে। এভাবে
সর্বোচ্চ ছবি দেওয়া বাগানিরা সেরার তালিকায় উঠে আসেন। এসব প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সদস্যরা
একে অপরের বাগানের দৈনন্দিন চিত্র জেনে যান। এর ফলে বাগানিদের মধ্যে বাগান নিয়ে উৎসাহটা
বাড়ে।
চট্টগ্রামে
ছাদবাগান বা ছাদকৃষি সম্পর্কে কৃষি বিভাগের কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে চট্টগ্রাম
বাগান পরিবার এখন নিজেরাই এসব তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছে। সংগঠনের ২২ হাজার সদস্যের
মধ্যে ৫ হাজার সদস্য নিজের ছাদে বাগান করেছেন। এই পাঁচ হাজার ছাদবাগানির সবজি ও ফলের
বড় একটা চাহিদা মেটান নিজের বাগান থেকে।
ছাদবাগান
থেকে একটি পরিবার ঠিক কতটুকু খাবারের জোগান পেতে পারে, জানতে চাইলে জিয়াউল বারী বলেন,
মোটামুটি ছোট আকারের একটি ছাদবাগান থেকেও প্রতিদিনকার খাওয়ার মতো শাকসবজি পাওয়া যায়।
এ ছাড়া মৌসুমে পাওয়া যায় নানা ধরনের ফল। সারা বছরই ছাদবাগান থেকে কিছু না কিছু প্রাপ্তিযোগ
হয় বলে তিনি জানান। জানা গেল, শাকসবজি একেবারেই বাজার থেকে কিনতে হয় না, চট্টগ্রাম
বাগান পরিবারে এমন বাগানির সংখ্যা কম করে হলেও ২০০।
ছাদবাগান
করতে কত বড় ছাদ প্রয়োজন, কীভাবেই–বা শুরু করতে পারেন নতুন বাগানিরা? জানতে চাইলে জিয়াউল
বারী বলেন, মোটামুটি রোদ পড়ে এমন ৮০০ থেকে ৯০০ বর্গফুটের ছাদ হলেও ভালো বাগান করা সম্ভব।
জিয়াউলের
কাছ থেকে জানা গেল, একসময় প্যাশন, ড্রাগন, পারসিমন, পিচ, কমলা, আপেল বা আঙুর ছাদবাগানে
দেখা যেত না। এসব বিদেশি ফল এখন দেশি ফলের সঙ্গে ভালোভাবেই ছাদবাগানে ফলছে।
কথা
হয় চট্টগ্রাম বাগান পরিবারের সদস্য গৃহিণী আয়শা আক্তারের (৬০) সঙ্গে, দশ বছর ধরে ছাদবাগান
করছেন তিনি। নগরের ফয়’স লেকের লেকভ্যালী আবাসিক এলাকায় প্রায় সাড়ে চার গন্ডা জায়গার
ওপর করা একতলা বাড়ির ছাদে গড়ে তুলেছেন ফুল, ফল ও সবজির বাগান।
আয়শা
আক্তার বলেন, এই বয়সে অনেকে রোগে–শোকে কাতর থাকেন। কিন্তু বাগানের পেছনে সময় দেওয়ায়
তাঁর শরীর অনেকটাই ভালো।
আয়শা
আক্তারের বাড়ির পঞ্চাশ গজের মধ্যেই ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান ও আসমা হাবীব ফেরিন দম্পতির
চারতলা বাড়ি। দুজনেই বাগান পরিবারের সদস্য। ২০ বছর ধরে তাঁরা বাগান করছেন। আর ছাদবাগানে
ফল ও সবজির চাষ অর্থাৎ ছাদকৃষি করছেন পাঁচ বছর ধরে। ছাদবাগানে বেশির ভাগ সময় দেন আসমা
হাবীব। মূলত বাগানটি তাঁর নিজের হাতে গড়া। সম্প্রতি তাঁদের ছাদবাগানে গিয়ে দেখা গেল,
লাউ, টমেটো, শাকসহ হরেক রকমের সবজির ছড়াছড়ি। গোলাপ, টগর, স্থল পদ্মসহ জানা–অজানা ফুলের
সংখ্যাও কম নয়। আছে মাল্টা, কমলা, পেয়ারা, কলাসহ দেশি–বিদেশি নানা জাতের ফল।
হাবিবুর
রহমান জানালেন, প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে তাঁদের ছাদবাগানে। প্রতিদিনের সবজির চাহিদার
একটা বড় অংশ আসে নিজেদের বাগান থেকে।
All of us can do this
ReplyDelete